শের-ই-বাংলার ড্রেসিং রুমে মুশফিকুর রহিমের আসনের পাশেই যত্ন করে ঝোলানো থাকে তার ব্লেজার। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের ব্লেজার, যেটি গায়ে চাপিয়ে নামেন টস করতে। দিনের পর দিন অলস ঝুলে থাকতে থাকতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেও ধুলো পড়ে যাচ্ছিল ব্লেজারে। অধিনায়ক পরে সেটি সরিয়ে রেখেছেন। তবু ধুলো কিছু জমলে ফু দেওয়ার সময় হলো। আবার মুশফিকের গায়ে চাপবে আভিজাত্যময় ওই সবুজ ব্লেজার!
স্মৃতির ধুলো ঝেড়ে নেওয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সবশেষ কবে খেলেছে বাংলাদেশ, কে ছিল প্রতিপক্ষ, কেমন ছিল পারফরম্যান্স, চলছে স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো আর আলোচনা। অনভ্যস্ততার অস্বস্তি কাটিয়ে মরচে ধরা স্কিল ক্রিকেটাররা ঝালাইয়ের চেষ্টা করছেন অনুশীলনে। আবার শোনা যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের ডাক। সাড়ে ১৪ মাস পর!
সুনির্দিষ্ট করে বললে, ১৪ মাস ১৭ দিন পর। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবশেষ দিনটি ছিল গত বছরের ৩ অগাস্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে সেই টেস্টের শেষ চার দিনও আবার ভেস্তে গেছে বৃষ্টিতে। এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ টেস্ট বিরতি। টেস্ট খেলার জন্য এতটা অপেক্ষা করতে হয়নি আগে কখনোই।
সেটা অবশ্য শুধুই দিন-ক্ষণের হিসাব। নইলে টেস্ট খেলার দীর্ঘ অপেক্ষা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। প্রতিবারই এই লম্বা বিরতিগুলো এসেছে খুব বাজে সময়ে, যখন বাংলাদেশ হাঁটছিল উন্নতির পথে!
এবারের আগে সবচেয়ে বড় বিরতিটার কথাই ধরা যাক। ২০১০ সালে ভালোই করছিল বাংলাদেশ। ভারতকে অলআউট করা, নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে লড়াই করা, ইংল্যান্ডের সঙ্গেও কিছুটা লড়াই, ইংল্যান্ডে গিয়ে তামিম ইকবালের অসাধারণ সেই টানা দুই সেঞ্চুরি, দল হিসেবেও একটু এগোনোর ইঙ্গিত, এরপরই থমকে যাওয়া!
২০১০ সালের জুনের পর বাংলাদেশ টেস্ট খেলে ২০১১ সালের অগাস্টে। প্রায় ১৪ মাস পর। বিরতির পর প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের কাছে হার। আবার সব নতুন শুরুর পালা।
সেবারের ফেরা খুব দীর্ঘায়িত হয়নি। এবার প্রায় ১১ মাসের বিরতি। ২০১১ সালের ডিসেম্বর পাকিস্তান সিরিজের পর বাংলাদেশ আবার খেললো পরের বছরের নভেম্বরে।


তবে সবচেয়ে দীর্ঘ এবারের বিরতি তেমনি হয়ত এসেছিল সম্ভবত সবচেয়ে বাজে সময়েই। টেস্টে বরাবরই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের উন্নতি একটু দৃশ্যমান হচ্ছিল। পায়ের নীচে জমিনটা শক্ত অনুভূত হচ্ছিল একটু হলেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় তামিম-ইমরুলের রেকর্ড জুটিতে বীরোচিত ড্র, বৃষ্টির অবদান থাকলেও ভারতের বিপক্ষে ড্র, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার পর বৃষ্টিতে ড্র, সিরিজও ড্র।
সেখান থেকে কোথায় পরের ধারে এগিয়ে যাবে দল, হলো উল্টো যাত্রা। সবচেয়ে সুসময়ের পরই সবচেয়ে লম্বা বিরতি!
বাংলাদেশর এই লম্বা বিরতিগুলোয় আইসিসির ভবিষ্যত সূচির দায় বা দুর্বলতা তো ছিলই, তবে সবচেয়ে বেশি দায় বিসিবিরই। ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আগের সময়টুকু ইচ্ছে করেই টেস্ট বাদ দিয়ে ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এবারের বিরতির সময়টাতেও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট খেলার সুযোগ না নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য খেলা হয়েছে শুধু টি-টোয়েন্টি। বাংলাদেশই সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র দেশ, যারা বিশ্বকাপের আগে পারলে আর সব খেলা বাদ দিয়ে দেয়। সেটার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যায়। আর কে না জানে, টেস্টে উন্নতি করতে হলে বেশি খেলার বিকল্প নেই!


বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্যারিয়ারে তিন দফায় পড়েছেন লম্বা বিরতির অশুভ চক্রে। কিছু করার নেই। আক্ষেপ নিয়ে বলছেন, ক্যারিয়ারের তিন বছর বসে থেকেই শেষ হলো। পরমুহূর্তেই আবার অসহায়ের মতো হাসিতে জানান, প্রতিবারই বিরতির পর শুরুর সময়টা মনে হয় নতুন করে শুরুর মত!
এবার তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি, ফিটনেস ক্যাম্প মিলিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট প্রস্তুতির অবস্থা আরও করুণ। সাকিব আল হাসান মনে করতে পারেন না, শেষ কবে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলেছেন! পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, জাতীয় লিগে একটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সেটিও বৃষ্টিতে পুরো হয়নি।
তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহরা বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে। এই সময়টায় ইমরুল খেলেছেন কেবল একটি ম্যাচ। অথচ তারা সবাই দলের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অংশ।


সাকিব তাই বলছেন, “একটা সময় তবু জাতীয় লিগ খেলা হতো। এখনতো সেগুলো খেলা হয় না। ওয়ানডেই খেললাম আমরা এক বছর পর। ওটাও মানিয়ে নিতে প্রথম দুই-তিন ম্যাচ আমাদের সময় লেগেছে। অনেকক্ষণ ধরে বোলিং, অনেকক্ষণ ধরে ব্যাটিং করা সব কিছুই অন্যরকম একটা চ্যালেঞ্জ।”
ক্রিকেটাররা অবশ্যই সেই চ্যালেঞ্জ জিততে লড়বেন নিজেদের উজার করে। কিন্তু লড়াইয়ে নামার আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুত করে দিতে পারেনি তাদের অভিভাবক, বিসিবি!
গত মৌসুমের উন্নতির ধারা ধরে রাখার আশা সামান্যই। বরং সাকিব যেমন বলেছেন, আরেকবার নতুন করে শুরু!

About Admin MC3
This is dummy text. It is not meant to be read. Accordingly, it is difficult to figure out when to end it. But then, this is dummy text. It is not meant to be read. Period.
ConversionConversion EmoticonEmoticon